আজ || বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
শিরোনাম :
  তালায় খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ       তালায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাঝে হাঁসের বাচ্চা বিতরণ       তালায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রতিযোগিতা       তালায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের উদ্বোধন       তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের সমর্থনে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত       তালায় অসুস্থ বন্ধুর জন্য ৩০ হাজার টাকা দিলেন বন্ধুরা       তালায় তিন দিনব্যাপী কৃষি মেলার সমাপনী       সাতক্ষীরায় বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত       তালায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ক অবহিতকরণ সভা       তালায় আরএমটিপি প্রকল্পের বাজার সংযোগ সভা অনুষ্ঠিত    
 


দেশসেরা আমগাছ পরিদর্শনে ঠাকুরগাও

সিলেটের কলেজ শিক্ষক উজ্জ্বল চৌধুরী প্রস্তাবমত আমরা বগুড়ার নেকটারে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম দিনাজপুরের ঐতিহাসিক স্থানগুলি দেখার পর যাব ঠাকুরগাওয়ে। সেখানে বটগাছের মত বিশালাকৃতির আমগাছ দেখতে। কথামত আমাদের মাইক্রোবাস হাওয়ার বেগে চলতে লাগলো।ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির দশ জেলার দশ জনের জীবনের নানা কথকতার মধ্য দিয়ে অপরুপ এক বিনোদন আড্ডার মধ্য দিয়ে আমাদের সময় কাটতে লাগলো। যেখানে নতুন কোন খাবার দেখছি তাও কিনতে ভুল হচ্ছে না। এভাবে ঠাকুরগাঁও শহরে প্রবেশ করলাম, তখন সকাল ১১টা। সরকারি বয়েজ স্কুলের পাশে একটি হোটেলে খাওয়াদাওয়ার পর আমরা চলছি আর রাস্তার দুপাশে দিগন্তজোড়া হলুদ ধানক্ষেত দেখতে দেখতে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যে এত বন্ধুত্ব হল, মনেই হচ্ছিল না আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আলাদা আলাদা জনপদের মানুষ। প্রথম দেখাতে বটগাছের মত বিশাল আকৃতি দেখে অনেকেই ভুল করে বসেন। বট গাছের মত বিশাল আকৃতি হলেও গাছটি আসলে বট গাছ নয়, এটি একটি আমগাছ। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী সীমান্তে মন্ডুমালা গ্রামে আমগাছটি প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠে আজ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের কাছে নয়, এই আমগাছটি এখন বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে গোটা দেশে । গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমত ভাবতে হয়। আমগাছটির ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য শুধু দেশের পর্যটক নয়, বিদেশের অনেক অতিথিকেও আকৃষ্ট করে।
শত ব্যস্ততার মধ্যে একটু সময় করে ছুটে গিয়ে চোখ জুড়ানোর লোভ সামলাতে পারেন না তারা। ব্যতিক্রমী এই আমগাছ পশ্চাৎপদ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলাকে বিশ্বের কাছে আজ পরিচিত করে তুলেছে। সূর্যপুরী ঠাকুরগাঁও এর মানুষের প্রিয় একটি আমের জাত। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আটি জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য । সেই সূর্যপুরী জাতের লতা বোম্বাই জাতীয় লতানো বিশাল আকৃতির আমগাছটি দাঁড়িয়ে আছে প্রায় দুই বিঘারও বেশী জায়গা জুড়ে। উচ্চতা আনুমানিক ৮০-৯০ ফুট। আর পরিধি ৩৫ ফুটের কম নয়। মুল গাছের ০৩ দিকে ১৯টি মোটা মোটা ডালপালা বেড় হয়ে অক্টোপাসের মত মাটি আঁকড়ে ধরেছে। বয়সের ভারে গাছের ডালপালা গুলো নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ, সবুজ আমে টইটম্বুর। আমগুলোর ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম। স্থানীয়দের কাছে এই আমগাছের ইতিহাস অনেক পুরোনো। মাটি আঁকড়ে থাকা মোটা ডালপালা গুলো দেখে অনেকেই গাছটির বয়স অনুমান করতে চেষ্টা করেন। কেউ বলেন ১৫০ বছর, আবার কেউ বলেন ২৫০ বছর। তবে এলাকার বায়োজোষ্ঠ্যরাও গাছটির বয়স কত তার সঠিক ভাবে বলতে পারেন না। তাঁরা বলেন কোন সময় আমগাছটি লাগানো হয়েছে তা জানা নেই। প্রাচীন এই গাছটি সম্পর্কে তারা জেনেছেন তাঁদের বাপ-দাদার কাছ থেকে। তারা আরো জানান, এই আমগাছের চারা থেকে পাশে কয়েকটি গাছ লাগানো হয়েছিলো। ১৫ বছর পর সেটাও একই ভাবে ডালপালা মাটির দিকে নুয়ে পড়ছে। ১৫ বছর আগে লাগানো আমগাছটির আকৃতি দেখে সহজেই মূল গাছটির বয়স অনুমান করা যায়, গাছটির বয়স ২০০ বছরের কম নয়। জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় খুব সহজেই পৌছানো যায়।এখান থেকে আঁকাবাঁকা পথ ধরে আমগাছের কাছে পৌছুতে আমাদের পথভ্রম ঘটে কয়েকবার। সাপের মত এঁকেবেঁকে চলা পথের বুক চিরে আমাদের মাইক্রোবাস চললেও বহুবার স্থানীয় লোকের কাছে শুনতে হয়েছে, আর কতদুর! আমাদের টিমের সদস্য উজ্জ্বল চৌধুরী ও আলাউর রহমান গুগল ম্যাপ দেখে চলেছেন, রিপনসহ অন্যান্যরাও নানান খোশগল্প করছেন। এক সময় আমরা ঠিকঠাক পৌছালাম আমগাছটির কাছে। বিশ টাকার জনপ্রতি টিকিট কেটে হুড়মুড় করে ঢুকলাম। কে, কার আগে ছবি তুলবে সেই প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে গেল সবাই। তারপর গাছের মোটা ডালগুলোতে বানরের মত লাফিয়ে লাফিয়ে বিচরণে দৃশ্যপট মনে রাখার মত ছিল। একটা বড় ডালে ওঠার পর আমি আর নামতে পারছিলাম না, ভীষণ বিপদে পড়ে গেলাম। আলাউরদের সহযোগিতায়, সাইদুল স্যারের হাত ধরে নেমে বাচঁলাম। আমাদের ছোট্ট জীবনের একটি দিন অন্তত আমগাছটির জন্য বরাদ্দ করে চলে আসুন ঠাকুরগাওয়ের এই আম্রতলায়।


Top